Gutka Consumption & Effect Explained: ২০২৫ সালে ‘শহিদ’ হবেন ৮ লক্ষ ‘গুটখাম্যান’! ক্যানসার হবে ১৭ লক্ষের – Bengali News | Featured on Gutka Consumption: Mouth Freshner killing Lakhs of People Every year, How it Cause Cancer, Know in Depth Story

0
gutka-consumption.jpeg

দেশ রঙিন করছে গুটখাম্যান!Image Credit source: TV9 বাংলা

শহিদই বটে! গুটখার মতো ‘অষ্টমাশ্চর্য’ বস্তুটি প্রতিদিন প্রাণ কাড়ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে, ভয়াবহ ছবি দেখিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে গুটখা খাবেন না। আপনারও এই একই পরিণতি হতে পারে। এ সব জেনেও মৃত্যুর মুখে নিজেকে উৎসর্গ করছেন কিছু মানুষ। চিবোতে চিবোতে। অনেকে বলবেন, তা বলে শহিদ কেন? একে তো আত্মহত্যা বলা যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গুটখা থেকে প্রায় ৬৪ শতাংশ ট্যাক্স পায় সরকার। সিগারেট থেকে ৫৩ শতাংশ, বিড়ি থেকে ১৬ শতাংশ ট্যাক্স নেওয়া হয়। বুঝতেই পারছেন, দেশকে লাভবান করে কীভাবে চিবোতে চিবোতে মৃত্যুবরণ করেন গুটখাম্যানরা। এই মুহূর্তে দেশে গুটখা মহামারী আকার ধারণ করেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু কতটা, চলুন দেখা যাক।

তাজমহলের মতো স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু করে মিউজিয়াম বা ঝা চকচকে নতুন কোনও বিল্ডিং। সৌন্দর্য্য নষ্ট করেছে লাল লাল ছোপ। আপনা-আপনি নয়, গুটখাপ্রেমীদের দৌলতেই এই দুর্দশা। হাজারো নিষেধাজ্ঞা, মোটা অঙ্কের জরিমানা- কোনও কিছুতেই বাগে আনা যায় না গুটখাপ্রেমীদের। প্রতি বছর সরকারের লক্ষাধিক টাকা খরচ করতে হয় শুধু স্মৃতিসৌধ বা হেরিটেজ সাইট থেকে গুটখার ছোপ তুলতে। গুজরাট, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, বিহার , মহারাষ্ট্র সহ একাধিক রাজ্যেই গুটকার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এ সব রাজ্যে গুটখা বা তামাকের প্যাকেটজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! লুকিয়ে বা প্রকাশ্যেই দেদার বিক্রিবাট্টা চলছে। সরকারও যেন নীরব দর্শক। তামাকজাত পণ্য সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, এ কথা সকলের জানা, কিন্তু তা শরীরে ঠিক কতটা ক্ষতি করছে জানেন?

রাস্তার ধারে ছোট ছোট দোকানে সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখা থাকে গুটখা ও পান মশলা। মুখশুদ্ধি হিসাবে অনেকেই পান মশলা খান। তবে জানেন কি এই পানমশলাই আপনার মৃত্যুর পথ প্রশস্ত করছে প্রতিদিন? সম্প্রতিই একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে পথ দুর্ঘটনায় বা গুলির আঘাতে প্রতি বছর যত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, তার মিলিত সংখ্যার থেকেও বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় গুটখা বা তামাকজাত পণ্যে!

গুটখা কী?

তামাক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, এ কথা জানা। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে তামাকজাত সমস্ত পণ্যের মধ্যে  গুটখাই সবথেকে ভয়ঙ্কর। গুটখা হল স্মোকলেস টোবাকো। অর্থাৎ এই তামাকজাত পণ্য সেবনের জন্য আগুন বা অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। এই ধরনের তামাক সাধারণত গালের পাশে বা মাড়ি কিংবা জিভের নীচে রাখা হয়। দীর্ঘক্ষণ রাখার ফলে মুখের লালারসের সঙ্গে তা মিশে যায়। তামাকজাত পণ্য চিবোনোয় লাল রঙের পিক তৈরি হয়, যা গুটখার পিক। আগে এটি চুইয়িং টোবাকো হিসাবেই বিক্রি করা হত। চিনের পর ভারতই দ্বিতীয় দেশ, যেখানে সর্বোচ্চ গুটখা সেবন করা হয়। 

কী করে তৈরি হয় গুটখা?

তামাক পাতা শুকিয়ে, তা কেটে বা গুঁড়ো করে সাধারণত বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সুপুরি ও অন্যান্য মশলা মেশানো থাকে। তবে একদম শুরুতে কিন্তু গুটখা পাওয়া যেত না। আগে মূলত নস্যি, যা নাক দিয়ে সেবন করতে হয়, সেই হিসাবেই বিক্রি হত। নস্যি নিলে বারবার পিক ফেলারও প্রয়োজন পড়ে না। তবে এই নস্যিও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। নাকের অন্দরের টিস্যু বা কোষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই শ্বাসযন্ত্রের পথ বা নালিও অবরুদ্ধ হয়ে যায়।

রোজ মুখে ঢালছেন ব্লিচ-

জামাকাপড় কাচা বা রঙ করার জন্য অনেক সময়ই ব্লিচ ব্যবহার করা হয়। এই ব্লিচ ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ত্বকের স্পর্শে এলেই তা জ্বলে যায়। তবে জানেন কি, যে গুটকা রোজ চিবোচ্ছেন, তা প্রায় ব্লিচের সমান।

স্মোকলেস টোবাকো বা এসএলটি পণ্যে থাকে আলকালাইন, যা ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনে নিকোটিন শুষে নেয়। এই আলকাইন কতটা ক্ষতিকর, তা বোঝার সহজ উপায় হল যেখানে জলের পিএইচ লেভেল ৭ থাকে, সেখানেই তামাকজাত পণ্যে পিএইচ লেভেল ৪.৯৫ থেকে ১২.৮২ থাকে। যা ব্ল্যাক কফি থেকে ব্লিচের মতো উচ্চ মাত্রার অ্যালকালাইনের সমান।

গুটখা ও ক্যানসার-

গুটখা সেবনে ক্যানসার হয়, এ কথা সকলের জানা। প্যাকেটের উপরে বিধিবদ্ধ সতর্কতাও থাকে। তবে তাতে বিশেষ একটা টনক নড়ে না। আইসিএমআর- র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারতে ১৭.৩ লক্ষ মানুষ নতুনভাবে ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। ৮.৮ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হবে ক্যানসার সংক্রান্ত রোগে।

২০২০ সালে তামাকজাত পণ্যের কারণে ক্যানসারের হার ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের গ্রামাঞ্চলের ৪০ শতাংশ ক্যানসার রোগীই গুটখা সেবন করেন।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারত প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ হারায় তামাকজাত পণ্য সেবনে রোগ ও মৃত্যুর কারণে।

কেন ক্যানসার হয়?

তামাকজাত পণ্যে টোবাকো স্পেসিফিক নাইট্রোসামাইন থাকে, যা আসলে কারসিনোজেনিক কেমিক্যাল। কারসিনোজেনিক কেমিক্যালের কারণেই ক্যানসার হয়। সিগারেট, গুটকা- সবেতেই এই উপাদান থাকে। টিএসএনএ যেমন এন-নাইট্রোনরসিকোটিন, এন-নাইট্রোসোয়ানাটেবিন থাকে গুটকায়, যা মুখ, ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য দায়ী।

আর কী কী রোগ হয়?

তবে গুটকা সেবনে শুধু ক্যানসারই নয়, আরও নানা ভয়ঙ্কর রোগ হয়। দিনের পর দিন গুটকা সেবন করলে মুখে ফাইব্রোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি এক ধরনের মাংসপিন্ড, যার কোনও চিকিৎসা নেই। এর থেকেও ভবিষ্যতে ক্যানসার হতে পারে।

মাড়ি আলগা হয়ে যায় গুটখা সেবনে। দীর্ঘদিন গুটখা চিবোলে মাড়িও আলগা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দাঁতে ছোপ, মাড়ি থেকে দাঁত আলগা হয়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে আবার শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা, মেটাবলিক হারে অস্বাভাবিকতা, লিভার, কিডনির সমস্যা, মূত্রথলিতে পাথর জমা এবং স্নায়ুরোগ পর্যন্ত হতে পারে।

ধূমপানে মৃত্যু-

গুটকা সেবনে যেমন মৃত্যু হয়, তেমন ধূমপানও কিন্তু শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ধূমপানের কারণে। ভারত, চিন, ব্রিটেন, ব্রাজিল, রাশিয়া, আমেরিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলেই এত সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে ল্যানসেট জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed