আলাদা আইনের প্রয়োজন নেই, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় একগুচ্ছ সুপারিশ জাতীয় টাস্ক ফোর্সের – Bengali News | National Task Force by Supreme Court Says No Need for Separate Law to Ensure Safety of Health Workers
নয়া দিল্লি: টিকল না চিকিৎসকদের দাবি। সুপ্রিম কোর্টের তৈরি ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স জানাল, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে পৃথক কোনও আইনের প্রয়োজন নেই। আরজি কর কাণ্ডের পরই চিকিৎসকদের অন্যতম দাবি ছিল, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় আইন তৈরি করা হোক। কিন্তু জাতীয় টাস্ক ফোর্স জানাল, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যে বিভিন্ন আইন ও কেন্দ্রীয় স্তরে ভারতীয় ন্যয় সংহিতা রয়েছে। এই আইনগুলিই সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আরজি কর কাণ্ডের পরই সুপ্রিম কোর্টের তরফে এই টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে সেই টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, ২৪টি রাজ্যে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হিংসা রুখতে এং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। আরও ২টি রাজ্যে আইন আনার প্রস্তুতি চলছে। এই আইনগুলি ও ভারতীয় ন্যয় সংহিতা ছোট-বড় অপরাধে সুরক্ষা ও বিচার দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, ছোটখাটো অপরাধ, যা প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ঘটে থাকে, তা রাজ্যের আইনেই বিচার সম্ভব। ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যয় সংহিতার কঠোর আইন রয়েছে। যে রাজ্যগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দিষ্টভাবে কোনও আইন নেই, সেখানে বিএনএস-র ধারাতেই বিচার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য আলাদা আইন তৈরির প্রয়োজন নেই।
৩৭ পাতার রিপোর্টে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখে পড়তে হয়, তা সমাধানে হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বল্প মেয়াদী, মাঝারি মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানের আকার ও ক্ষমতা অনুযায়ী এগুলি কার্যকর করা যায়।
হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমিটি গড়ার সুপারিশ করেছে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স। এই কমিটিতে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা থাকবেন, যারা নিয়মিত সিকিউরিটি অডিট করবে এবং সমস্য়াগুলি চিহ্নিত করবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ জমা দেওয়া হবে। তিনি একজন সিনিয়র আধিকারিককে নিয়োগ করবেন এই কমিটি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা তত্ত্বাবধানের জন্য।
যে হাসপাতালগুলিতে ৫০০-রও বেশি বেড রয়েছে, সেখানে সেন্ট্রালাইজড সিকিউরিটি কন্ট্রোল রুম তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে, যা সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। থাকবে কুইক রেসপন্স টিমও।
হাসপাতালের প্রবেশ পথে, ইমার্জেন্সি রুম ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে সিসিটিভির নজরদারির গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। যে হাসপাতালগুলিতে নেটওয়ার্কের সমস্যা, তা দ্রুত সমাধানের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে।
হাসপাতালের সুরক্ষায় স্থানীয় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। যে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে নিয়মিত পুলিশ পেট্রোলিং এবং অন সাইট আউটপোস্ট তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে। সময়ে অভিযোগ গ্রহণ, এফআইআর দায়েরের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে।
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও আইনি প্রোটোকল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন এবং বিচার প্রক্রিয়া আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের গায়ে হাত তুললে, বা হাসপাতালে ভাঙচুর করলে, তার কী শাস্তি হতে পারে, এই নিয়ে জনগণের মধ্যেও সতর্কতা প্রচার চালানো উচিত বলেই রিপোর্টে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মহিলাদের যে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষ করে নাইট শিফ্ট বা ফাঁকা ডিউটি এলাকায়, তা নিয়েও উল্লেখ করা হয়েছে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে। কর্মক্ষেত্রে পস অ্যাক্ট ২০১৩-র কাঠামো অনুযায়ীই হাসপাতালগুলিতে আভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গড়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যৌন হেনস্থা নিয়ে সচেতন করতে শি বক্স (SHe-Box) লাগানো, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সুরক্ষিত ডিউটি রুম এবং রাতের শিফ্টে যাতায়াতের ব্যবস্থার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।