Bangladesh Durga Puja: মন্দিরে ভারত-বিরোধী ব্যানার! ইউনুসের নাকের ডগায় মৌলবাদীদের আস্ফালন - Bengali News | Bangladesh: Islamists raise 16 point demand against celebration of Durga Puja - 24 Ghanta Bangla News

Bangladesh Durga Puja: মন্দিরে ভারত-বিরোধী ব্যানার! ইউনুসের নাকের ডগায় মৌলবাদীদের আস্ফালন – Bengali News | Bangladesh: Islamists raise 16 point demand against celebration of Durga Puja

0

ইউনুসের নাকের ডগায় দুর্গাপুজোর বিরোধিতায় রাস্তায় নামল মৌলবাদীরাImage Credit source: PTI and Reddit

ঢাকা: দুর্গাপূজা যত এগিয়ে আসছে, হাসিনাহীন বাংলাদেশে ততই চাপ বাড়ছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। এর আগেই কুলনা জেলায় মন্দির ভাঙচুর, দুর্গাপুজো কমিটিগুলির কাছে তোলা চেয়ে হুমকি চিঠি দেওয়ার মতো ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার একেবারে ইউনুসের নাকের ডগায়, ঢাকা শহরে দুর্গাপুজোর বিরোধিতায় রাস্তায় নামল মৌলবাদীরা। তাদের দাবি, হিন্দুদের সবথেকে বড় এই উৎসব, প্রকাশ্যে উদযাপন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এই সময় গোটা দেশে ছুটিও দেওয়া চলবে না। তাদের মতে, দুর্গাপুজোকে সর্বজনীন বলে দাবি করা অন্য ধর্মকে অবমাননা করার সামিল। এমনকি, জলাশয়ে প্রতীমা বিসর্জন দেওয়ারও বিরোধিতা করেছে তারা।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর), ‘ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা’ নামে একটি চরমপন্থী সংগঠন ঢাকার সেক্টর ১৩-এ মালিবাগ মোড়ে একটি সমাবেশ ডেকেছিল। সেখানে যোগ দেন চরমপন্থী সংগঠনটির কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে, মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে।

দুই বাংলার চিরন্তন বিশ্বাস, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু, এই কট্টরপন্থীদের দাবি, ধর্ম যারা যার, উৎসবও নাকি তার তার। তাই দুর্গাপুজো কোনও সর্বজনীন উৎসব নয়। একে সর্বজনীন বললে নাকি অন্য ধর্মের অবমাননা করা হয়। তাই কোনও প্যান্ডেলে দুর্গা পুজোকে সর্বজনীন বলে উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগানো যাবে না।

এছাড়া তাদের দাবি, রাস্তা বন্ধ করে যেখানে সেখানে পুজো করা চলবে না। মন্দিরের ভিতরেই পুজো করতে হবে। রাস্তায় মণ্ডপ বানিয়ে বা পুজো উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করে যানজট তৈরি করা বা জনসাধারণের চলাচলের অধিকারে বাধা দেওয়া যাবে না। প্যান্ডেলের পাশাপাশি তোড়নও নির্মাণ করা যাবে না। কারণ পুজোর তোড়নে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি থাকে। সেই ছবির নীচ দিয়ে গেলে নাকি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে।

জন-বিরক্তি তৈরি করে এমন কোনও কাজ করা যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে মন্দিরে জোরে মাইক বাজানো, যেখানে সেখানে পুজোর ব্যানার-পোস্টার লাগানো ইত্য়াদি।

দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে, মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে

তাদের আরও দাবি, পুজোর সময় নাকি বাংলাদেশের মন্দিরে মন্দিরে মদ্যপান করা চলে। তারা বলেছে, মদ্যপান বাংলাদেশে আইনত নিষিদ্ধ। তাই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কোনও মন্দিরে মদ খাওয়া চলবে না।

তারা আরও বলেছে, কোনও মন্দিরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংখ্যক মূর্তি বানানো কিংবা ইচ্ছামত উচ্চতার মূর্তির বানানো যাবে না। মূর্তিতে এমন কোনও উপাদান ব্যবহার করা যাবে না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর জন্য আদালতের তদারকিও চেয়েছে তারা।

ইনসাফ কায়েমকারীরা মূর্তি বিসর্জনেরও বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি এতে জল-দূষণ হয়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের কোথাও জলে মূর্তি ডোবাতে দেওয়া হয় না। এমনকি, ভারতের অনেক রাজ্যেও জলাশয়ে মূর্তি বিসর্জন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও তাই করতে হবে।

দূর্গা পুজোয় বাংলাদেশে একদিন ছুটি দেওয়া হয়। হিন্দুদের দাবি তিনদিনের ছুটি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারর এক উপদেষ্টা প্রথমে হিন্দুদের এই দাবিকে সমর্থনও করেছিলেন। পরে, তাঁকেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এবার ইনসাফ কায়েমকারীরা দাবি করেছে দুর্গাপুজোর ছুটি ঐচ্ছিক করতে হবে। কারণ হিন্দুরা নাকি বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ২ ভাগ। তাদের জন্য ৯৮ শতাংশ মুসলমানদের কাজ থেকে দূরে রাখলে নাকি সেই দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে।

পুজো উপলক্ষে কোনও মুসলমানের থেকে আর্থিক সাহায্যও নেওয়া যাবে না বলে, দাবি করেছে তারা। কারণ, হিন্দুদের পুজোয় মুসলমানদের আর্থিক অংশগ্রহণ নাকি শরীয়তে নিষিদ্ধ। এছাড়া, দুর্গাপুজোর প্যান্জেলে কোনও মুসলমান ব্যক্তি যাতে প্রবেশ না করতে পারে এবং পুজার প্রসাদ যাতে মুসলমানরা না খায়, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা। তাদের মতে এগুলি হারাম।

সম্প্রতি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, দুর্গাপুজোর সময় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানি করার ঘোষণা করেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এটা কোনও উপহার নয়। ওই মাছ রফতানি করা হচ্ছে মাত্র। ইউনুস সরকারের এই সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেছে এই কট্টরপন্থী সংগঠন। তাদের দাবি, বাংলাদেশের রফতানি নীতি অনুসারে, ইলিশ মাছ রফতানিযোগ্য নয়। কাজেই এই সিদ্ধান্তে ইউনুস সরকার সেই নীতি লঙ্ঘন করেছে। দেশের জনগণের এর জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র জনতা।

ইউনুস প্রশাসনের নিরাপত্তার আশ্বাস সত্ত্বেও আকাশে-বাতাসে চাপা উত্তেজনা

বাংলাদেশের অনেক মন্দিরে নাকি হিন্দু উগ্রপন্থীরা ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৈঠক করে বলে দাবি করেছে তারা। এই ছুতোয় মন্দিরগুলি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইনসাফ কায়েমকারী। এখানেই থামেনি তারা। ভারতকে, বাংলাদেশের জাতীয় শত্রু বলে দাবি করেছে। তাই, বাংলাদেশি হিন্দুদেরও ভারত বিরোধিতা করতে হবে। এই জন্য মন্দিরগুলোতে ভারত-বিরোধী ব্যানার ও পূজার আলোচনায় ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে হবে।

এই দাবিগুলি কোনও অসাম্প্রদায়িক ছবি নয়। কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা আশাও করা যায় না। তবে, মহম্মদ ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের পর অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, হিন্দুদের উপর হামলা কোনও ধর্মীয় কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামি লিগপন্থী হওয়ায় হামলার নিশানা হয়েছেন তাঁরা। দুদিন আগেই আমেরিকায় বসে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, ‘হিন্দুরাও আমাদের নাগরিক’ বলে, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বার্তা দিয়েছিলেন। গত রবিবারই বাংলাদেশের পুলিশ দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তার ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু, মৌলবাদীদের এই প্রকাশ্য আস্ফালন বলে দিচ্ছে বাস্তব ছবিটা অতটা মধুর নয়। এই আস্ফালনে উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশি হিন্দুদের। ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস সত্ত্বেও আকাশে-বাতাসে চাপা উত্তেজনা রয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed

x