Kunal Ghosh Controversy: তৃণমূল vs তৃণমূল, কুণাল যখন তার ‘মধ্যমণি’-দেখুন কখন, কীভাবে… – Bengali News | Trinamool Congress Kunal Ghosh and some of his comments against his own party leaders
কলকাতা: জীবনের ‘ওঠা-পড়া’ খুব একটা ‘গায়ে মাখেন না’ তিনি। তাই বোধ হয় ‘আগাগোড়া বোরোলিন মেখে চলা’ মানুষটা সব সময় সব কথা সোজাসাপ্টা কথা বলতেই পছন্দ করেন। কোনও রাখঢাক না রেখেই মন্তব্য করে দেন। কথা হচ্ছে, কুণাল ঘোষকে নিয়ে। একদা দুঁদে সাংবাদিক। রাজ্যসভার সাংসদ। তারপর জেলযাত্রা। লাঞ্ছনা। কটূক্তির শিকার। সেখান থেকে বেরিয়ে আবার রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে। আবার মমতা-অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে। এবার আর সাংসদ নয়, দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র। তৃণমূলের সাম্প্রতিককালে সবথেকে বেশি চর্চিত মুখপাত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কথায় কথায় আক্রমণ শানান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। বিরোধীদের উদ্দেশে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ, এসব তো থাকবেই। কিন্তু দলের মধ্যেও কোথাও কোনও ইস্যুতে আপত্তি থাকলে, সোজাসাপ্টা কথা বলতে পিছ-পা হন না কুণাল। এই যেমন সম্প্রতি দলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত বক্সির মন্তব্যে হোক, কিংবা অর্জুন সিং ইস্যুতে হোক, কোনও রাখঢাক না রেখেই নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে এই প্রথম নয় বিগত দিনগুলিতে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।
কুণাল VS পার্থ
দলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন সবে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন। আর সঙ্গে সঙ্গে পার্থর বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়েছিলেন কুণাল। নিজের বন্দিদশার যন্ত্রণা উসকে সরাসরি নাম ধরে তোপ দেগেছিলেন পার্থর বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, “আমার পিছনে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে পার্থবাবুও একজন ছিলেন। আমি যখন বন্দি ছিলাম, যন্ত্রণায় জ্বলে মরেছি। তখন খুঁচিয়ে বলা হয়েছে আমি নাকি পাগল।” প্রতিটি কথায় ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল পার্থর বিরুদ্ধে তাঁর রাগ-অভিযোগের কথা। কুণাল বলেছিলেন, “আমি আশা করি জেল কর্তৃপক্ষ একদম সাধারণ বন্দির মতো ব্যবস্থা নেবে। আমার ক্ষেত্রে যা যা নিয়ম হয়েছে, তাই তাই হবে। জেল হাসপাতাল নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সেলে রাখতে হবে।”
কুণাল VS ফিরহাদ
পার্থর গ্রেফতারির পর শুরু থেকেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে গিয়েছেন কুণাল। সেই সময়, পার্থর গ্রেফতারির পর একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘কুণাল মন্ত্রিসভার সদস্য নন।’ সঙ্গে এও বলেছেন, ‘আমাদের যৌথ দায়িত্ব। আমি সেই মন্ত্রিসভার সদস্য, পার্থদাও মন্ত্রিসভার সদস্য।’ কুণাল যে মন্ত্রিসভার কেউ নন, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় বেজায় চটেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র। ঝাঁঝালো কুণাল বলেছিলেন, “আমি যে মন্ত্রী নই, তা আমাকে স্মরণ করাতে হবে না। আমার কোনও হ্যাংলামি নেই। এসব মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ দেখাবেন না। মন্ত্রী হতে না পারলে, যাঁদের জীবন অসম্পূর্ণ, এসব তাদের দেখাবেন।”
কুণাল VS দেবের সিনেমা
তৃণমূলের সাংসদ দেব। অন্যদিকে বিজেপির মিঠুন। তাঁদের যুগলবন্দিতে অভিনীত সিনেমা ‘প্রজাপতি’ নন্দনে জায়গা পায়নি। সেই নিয়েও তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল। দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, মিঠুন চক্রবর্তীতে বিজেপিতে থাকার কারণেই তাঁকে বয়কটের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে কুণাল আবার দেবের অভিনয়ের সুখ্যাতি করলেও বলেছিলেন, ‘মিঠুনদার জন্যই সিনেমা ডুবে গিয়েছে।’ তবে মিঠুন চক্রবর্তীকে ঠুকে কুণালের এই মন্তব্য মোটেও ভালভাবে নেননি দেব। বলেছিলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মুখপাত্র। সিনেমাটা আমার উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’ কুণালের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা জানিয়েও, তাঁর (কুণালের) সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন দেব।
কুণাল VS কল্যাণ
সেই সময় করোনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সেই সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে বলেছিলেন, ‘এখন মেলা, খেলা, ভোট সব বন্ধ রাখা উচিত। দু’মাস সব বন্ধ রাখা উচিত।’ এরপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে কারও কোনও ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে না। কল্যাণের মন্তব্যের পর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া আসে কুণালের দিক থেকেও। বলেছিলেন, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গা। সঙ্গে আরও বলেছিলেন, ‘দলের সাধারণ সৈনিক হিসেবে তাঁর কথা আমাদের চুপ করে শোনা উচিত।’ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথা, দলেরই মত বলে জানিয়েছিলেন কুণাল। ব্যক্তিগত স্তরেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি কল্যাণকে। খোঁচা দিয়ে কুণাল বলেছিলেন, কল্যাণবাবু সন্ধের আগে বলেছেন নাকি পরে বলেছেন, সেটাও দেখতে হবে।
কুণাল VS সুব্রত বক্সি
সুব্রত বক্সি। বর্ষীয়ান নেতা। দলের রাজ্য সভাপতি। সম্প্রতি সুব্রত বক্সি লোকসভা ভোটে দলের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “এই নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি লড়াই করেন, নিশ্চিতভাবে আমার ধারণা তিনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই লড়াই করবেন।” সুব্রত বক্সির বাক্যগঠন নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন কুণাল। বলেছিলেন, “পিছিয়ে শব্দটা অভিষেকের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতে পারে না। বাক্য গঠনটা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পায়ের সমস্যার জন্য দুর্গাপুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করছিলেন, তখন সুব্রত বক্সি দলনেত্রীকে বলেছিলেন, “বাংলার মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলা মনে করছে কোথাও কোথাও মমতাদি হারিয়ে যাচ্ছেন। আপনি আবার চলতে আরম্ভ করলে আমরা আবার বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে পারব।” সেই নিয়েও কারও নাম না করে কটাক্ষ করেছিলেন কুণাল। তৃণমূল মুখপাত্র বলেছিলেন, “আমি শুনেছি পুজোর আগে একবার মমতাদিকে বলা হল, ‘দিদি আপনি নামুন সবাই বলছে আপনি হারিয়ে যাচ্ছেন’। কেন বলা হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কখনও হারিয়ে যেতে পারেন?”
কুণাল VS অর্জুন
সম্প্রতি ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল তৃণমূলের অন্যতম অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। সৌজন্যে এলাকায় দলেরই দুই নেতা। সোমনাথ শ্যাম ও অর্জুন সিং। দু’জনের ঠোকাঠুকি থামার নাম-গন্ধ নেই। এসবের মধ্যেই সাংসদ অর্জুন সিং বলেছিলেন, এই সবের কারণে বিজেপির হাত শক্ত হচ্ছে। আর এরপরই কুণাল আজ অর্জুনকে পরামর্শ দিয়েছেন, আগে নিজের এলাকা সামলানোর জন্য, তারপর দলের কথা ভাবতে। অর্জুনের দলবদল নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েনি। বলেছেন, “ভোটের আগে তো বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন, তখন তো দলের জন্য দরদ ছিল না। ফিরে এসেছেন, এবার প্রায়শ্চিত্ত করুন।”
বার বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রতিবারই সোজাসাপ্টা কুণাল। নিজের বক্তব্যে, নিজের মন্তব্যে অবিচল। শোনা যায়, পার্থ ইস্যুতে মুখ খুলে বেশ ফ্যাঁসাদে পড়তে হয়েছিল কুণালকে। তাঁকে নাকি ‘সেন্সর’ করা হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। সেই সময় এক দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজোয় বোরোলিনের কথা শুনিয়েছিলেন কুণাল। বলেছিলেন, “আমি বোরোলিন নিয়ে চলি যাতে জীবনের ওঠাপড়া যেন সহজে গায়ে না লাগে। আমি কঠিন দিনের সৈনিক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু আমার সেনাপতি নন, তাঁকে আমি ভালবাসি।” তাহলে কি সেই সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের দৌলতেই বার বার খুল্লামখুল্লা নিজের অভিমত প্রকাশ করে দিতে পারেন কুণাল?